SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Social Account

নবম-দশম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - ফিন্যান্স ও ব্যাংকিং - বাণিজ্যিক ব্যাংক ও তার পরিচিতি | NCTB BOOK

আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসাবে ব্যাংক দেশের শিল্প, বাণিজ্য, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন রকম সেবা প্রদান করে থাকে। ব্যাংকের সেবাকে আমরা দুই ভাগে ভাগ করতে পারি

  1. প্রধান কার্যাবলি
  2. বিশেষ ও অন্যান্য কার্যাবলি।

ক) প্রধান কার্যাবলি

১) আমানত গ্রহণ ও সুদ প্রদান : আমানতকারীর নিকট হতে তাঁদের সঞ্চয় বিভিন্ন প্রকার চলতি, সঞ্চয়ী ও স্থায়ী আমানত হিসাবে গ্রহণ করা ব্যাংকের একটি প্রধান কাজ। সঞ্চয়ী ও স্থায়ী হিসাবের আমানতকারীদের জমার অর্থের ওপর ব্যাংক নির্দিষ্ট হারে সুদ প্রদান করে থাকে। চলতি হিসাবে সুদ প্রদান করা না হলেও সেখানে অন্য কিছু সুবিধা দেওয়া হয়।

২) মূলধন গঠন : জনগণের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সঞ্চয়গুলো বিভিন্ন হিসাবের মাধ্যমে একত্রিত করে ব্যাংক মূলধন গঠন করে থাকে।

৩) ঋণ মঞ্জুর ও সুদ গ্রহণ : ব্যাংক জনগণের নিকট হতে সঞ্চিত অর্থ আমানত হিসেবে গ্রহণ করে, সেই অর্থ ঋণগ্রহীতাদের বিভিন্ন মেয়াদে ঋণ হিসাবে প্রদান করে। ঋণ প্রদান করা ব্যাংকের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ ঋণগ্রহীতাদের ঋণ দিয়ে ব্যাংক একদিকে যেমন উৎপাদনমুখী কাজে সহায়তা করে, অন্যদিকে সেই ঋণের উপর যে সুদ আদায় করে তা ব্যাংকের আয়ের প্রধান উৎস। ব্যাংক আমানতকারীদের যে হারে সুদ প্রদান করে ঋণগ্রহীতাদের নিকট থেকে তার অধিকতর হারে সুদ আদায় করে। এটি নিট / প্রকৃত সুদ যা ব্যাংকের কার্য পরিচালনাগত আয়ের একটি অংশ।

৪) ঋণ আমানত সৃষ্টি : ঋণ গ্রহণের সময় ঋণগ্রহীতাকে ব্যাংকের সাথে একটি হিসাব খুলতে হয়। ঋণের অর্থ সেই হিসাবে জমা বা ক্রেডিট করা হয়। এরপর ঋণগ্রহীতা যত পরিমাণ টাকা সেই হিসাব থেকে উত্তোলন করে, সেটা ওই হিসাবে ডেবিট করা হয়। এভাবে ব্যাংক ঋণের মাধ্যমে আমানতের সৃষ্টি করে।

৫) বিনিময় মাধ্যম সৃষ্টি : আর্থিক লেনদেন ও দেনা-পাওনা নিষ্পত্তির মাধ্যম হিসেবে ব্যাংক চেক বিনিময় বিল, প্রত্যয় পত্র, ব্যাংক ড্রাফট, পে-অর্ডার, ডেবিট কার্ড, ক্রেডিট কার্ড ইত্যাদির ব্যবহার করে থাকে।

৬) নোট ইস্যু : সাধারণ বাণিজ্যিক ব্যাংক সরাসরি মুদ্রা প্রচলন করে না, এটা করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে বাণিজ্যিক ব্যাংক পরোক্ষভাবে মুদ্রা প্রচলনে সহায়তা করে। যেমন ধরা যাক তোমার সোনালী ব্যাংকে একটি সঞ্চয়ী হিসাবে ১ লক্ষ টাকা জমা আছে। এমতাবস্থায় তুমি যদি ৬০ হাজার টাকার কম্পিউটার ক্রয় কর তবে তোমার একাউন্টের চেকে তুমি টাকা পরিশোধ করতে পার । এভাবে ব্যাংক চেক কখনো কখনো বিনিময়ের মাধ্যমে হিসাবে এবং মুদ্রার বিকল্প হিসেবে কাজ করে সরকারের মুদ্রা প্রচলনের কাজটি সহজ করে দেয়

৮) অছি হিসেবে কাজ : বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো তাদের মক্কেলদের সম্পত্তির অছি (Trustee) এবং সংস্থার আর্থিক সচ্ছলতার সার্টিফিকেট প্রদান করে থাকে।

৯) আমদানি-রপ্তানি সাহায্য : আমদানিকারক দেশি মুদ্রা থেকে বৈদেশিক মুদ্রা ও রপ্তানিকারকদের বৈদেশিক মুদ্রা থেকে দেশি মুদ্রায় রূপান্তর করা প্রয়োজন, যা ব্যাংকগুলোর অন্যতম কাজ। আবার প্রত্যয় পত্র বা Letter of Credit (LC) -এর মাধ্যমে ব্যাংক বৈদেশিক বাণিজ্যে রপ্তানিকারককে আমদানিকারকের পক্ষ থেকে অগ্রিম অর্থ প্রদানের ব্যবস্থা করে। প্রত্যয় পত্র এমন একটি ব্যবস্থা, যেখানে আমদানি ও রপ্তানিকারকের মধ্যে আর্থিক এবং ব্যবসায়িক সম্পর্ক স্থাপনের ক্ষেত্রে তাদের মনোনীত ব্যাংক দুই পক্ষের স্বার্থ সংরক্ষণের মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ এবং বৈদেশিক ব্যবসা-বাণিজ্যে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। আমদানি-রপ্তানি সংক্রান্ত কার্যাদি সম্পাদন ও উপদেশ প্রদান করা ব্যাংকের একটি প্রতিনিধিমূলক কার্য ।

১০) সরকারের কোষাগার হিসেবে কাজ করে : কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা অন্য কোনো নির্বাচিত ব্যাংক সরকারের কোষাগার হিসেবেও কাজ করে থাকে।

১১) বিনিময় বিল ভাঙানো : ব্যাংক মক্কেলের পক্ষে বাট্টার মাধ্যমে বিনিময় বিল ভাঙিয়ে ব্যবসায় বাণিজ্যে সহায়তা করে থাকে।

খ) বিশেষ ও অন্যান্য কার্যাবলি

১) মূলধন বিনিয়োগ : ব্যাংক ঋণ প্রদানের পাশাপাশি অন্যান্য শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে মূলধন বিনিয়োগ করে, যা একটি দেশের মোট উৎপাদন ও মূলধন গতিশীলতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

২) অর্থনৈতিক উন্নয়নে ভূমিকা : ব্যাংক একটি দেশের সার্বিক অর্থনীতি তথা শিল্প, বাণিজ্য, পরিবহন, যোগাযোগ, গৃহনির্মাণ, শিক্ষার ব্যাপক অগ্রগতি তথা দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

৩) অর্থ স্থানান্তর : ব্যাংক তার বিনিময় মাধ্যমের সাহায্যে দেশের অভ্যন্তরে ও বাইরে অর্থ স্থানান্তর করে থাকে।

৪) অর্থের নিরাপত্তা প্রদান : ব্যাংক জনগণের অর্থ জমা রাখার মাধ্যমে অর্থের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। এ ছাড়া গ্রাহক তার মূল্যবান সম্পদের দলিলপত্র, অলংকারাদি লকার সেবার মাধ্যমে ব্যাংকের কাছে জমা রাখে।

৫) পরামর্শ দান : মক্কেলদের অনুরোধে বিভিন্ন প্রকার ব্যবসায়িক পরামর্শ দেওয়া ও তাদের সম্পদ ব্যবস্থাপনা করা যেমন: বাড়িভাড়া আদায় করাও ব্যাংকের কাজ।

৬) কর্মসংস্থান : ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটি দেশের কর্মসংস্থানের সহায়তা করে থাকে এবং দেশের অর্থনীতিতে ঋণ সরবরাহের কারণে পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থানের যোগান দিয়ে থাকে।

৭) ঋণ নিয়ন্ত্রণ : কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুদ্রাবাজারের নিয়ন্ত্রক হিসেবে বাণিজ্যক ব্যাংকগুলোর প্রদত্ত ঋণের সংকোচন ও সম্প্রসারণের মাধ্যমে অর্থ ও ঋণ নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এটা অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিতকরণ ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্য একান্ত জরুরি।

৮) কৃষি উন্নয়ন : কৃষিক্ষেত্রে ঋণ ও অন্যান্য সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে ব্যাংক কৃষি উন্নয়ন ত্বরান্বিত করছে।

৯) শিল্পোন্নয়ন : ব্যাংক শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলোকে দীর্ঘমেয়াদে ঋণ প্রদানের মাধ্যমে শিল্পোন্নয়নের সাহায্য করে থাকে।

১০) আঞ্চলিক উন্নয়ন : ব্যাংকের শাখা বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত থাকায় একটি দেশের আঞ্চলিক উন্নয়নেও ভূমিকা রেখে থাকে।

Content added || updated By